বিশেষ প্রতিনিধি:কংগ্রেসের হাত ধরলে বিদায় হতো না ঝাড়ুর, আম আদমি পার্টি-কংগ্রেস জোট গড়লে দিল্লির মসনদের আশা অপূর্ণই থেকে যেতো বিজেপি’র— ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘিরে উঠে আসছে এমনই হিসাব-নিকাশ। বলা হচ্ছে, ইনডিয়া জোটের মধ্যে ঐক্যের ঘাটতিই ডুবিয়েছে কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি-আপ’কে। দলের শীর্ষ নেতাদের একের পর এক কেলেঙ্কারি, দুর্নীতির অভিযোগকেও দেখা হচ্ছে আম আদমি পার্টির পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে।
দীর্ঘ ২৭ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অতঃপর দিল্লিতে গেরুয়া শিবিরের প্রত্যাবর্তন। পরবর্তী শাসক হিসেবে বিজেপিকেই বেছে নিয়েছে সেখানকার ভোটাররা। মোদি ম্যাজিক নাকি সাংগঠনিক দুর্বলতা, কিসের কাছে ধরাশায়ী হলো ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি? ফল প্রকাশের পর চলছে সেই বিশ্লেষণ।
কংগ্রেসের সাথে জোট গঠন না করাকেই এবার দেখা হচ্ছে আম আদমি পার্টির দিল্লি পতনের মূল কারণ হিসেবে। রাজনীতিকরা দেখিয়েছেন, কংগ্রেস আর আম আদমি পার্টি জোট করলে সরকার গঠনে দরকারি ৩৬টি আসন পেতে পারতো কেজরিওয়ালের দল। কংগ্রেসকেও একহাত নিচ্ছে অনেকে। যেখানে, ৬৫ আসনেই বাজেয়াপ্ত হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীদের জামানত। এতে, লাভ তো হয়ইনি উল্টো ক্ষতিই হয়েছে আম আদমি পার্টির। নষ্ট হয়েছে ভোটব্যাংক।
৭০টির মধ্যে ১৪ আসনেই বিজেপির জয়ের ব্যবধানের চেয়ে সম্মিলিতভাবে বেশি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি। অথচ, জোট গড়লে পাল্টে যেতো সমীকরণ। নয়াদিল্লিতে মাত্র ৪ হাজার ৯৯ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কিন্তু আসনটিতে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ভোট। অথচ জোটবদ্ধ হলে বদলে যেতো আম আদমির হিসাব-নিকাশ।
জংপুরা আসনেও একই চিত্র। মাত্র ৬৭৫ ভোটে হেরেছেন আম আদমি পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী মণিশ সিসোরিয়া। অথচ কংগ্রেসের ঝুলিতে গেছে ৭ হাজারের বেশি ভোট। সৌরভ ভরদ্বাজ, সোমনাথ ভারতির মতো শীর্ষ নেতারাও পরাজয়ের মুখ দেখেছেন মাত্র দুই থেকে তিন হাজার ভোটের ব্যবধানে। শুধু তাই নয়, মঙ্গলাপুরি, রাজেন্দ্রনগর, সঙ্গমবিহার, ছত্তরপুরসহ আরও কয়েকটি আসনে জোটের অভাবে ভুগতে হয়েছে দলটিকে।
গতবারের চেয়ে ১০ শতাংশ কমে এবারে কেজরিওয়ালের দল পেয়েছে ৪৩.৮ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে, মোদির বিজেপি পেয়েছে ৪৫.৮ শতাংশ ভোট। তবে জোটে নির্বাচন করলে আরও সাড়ে ৬ শতাংশর মতো ভোট যুক্ত হতো আম আদমির ঝুলিতে।
কেজরিওয়ালের পরাজয়ের পেছনে আরও কিছু কারণ দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, উন্নয়নে নজর না দিয়ে ঝগড়া বিবাদেই ব্যস্ত ছিল তার দল। একের পর এক দুর্নীতি, কেলেঙ্কারির সাথে শীর্ষ নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়াকেও ভরাডুবির অন্যতম কারণ মনে করা হচ্ছে। ঠিক যে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করেছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি।
Leave a Reply